যেখানে শিবের দর্শন পেয়েছিলেন রাবনের পিতা!
মহাদেবের অলৌকিক ধাম
সাধুর উদ্দেশ্যে নিবেদন করা হয় ইলাইচি
অতি সুন্দর করে সাজানো হয় শিবলিঙ্গকে
सर्वविध्यानामीश्वरः सर्वभूतानां।
ब्रम्हाधिपतिर्ब्रम्हणोधपतिर्ब्रम्हा शिवो मे अस्तु सदाशिवोम।।
অর্থাৎ সমস্ত জ্ঞানের দেবতা, ভূতের অধিপতি, ব্রহ্ম বেদের দেবতা,এবং রক্ষাকর্তা দেবাধিদেব মহাদেবকে প্রনাম।
নয়া দিল্লী।
শিব চিরন্তন, তিনি অসীম,তিনিই বেদ,শাস্ত্র ও ধর্মের মূল এবং জীবনের চূড়ান্ত সত্য। আজ আমরা শিবের এমন এক রূপের কথা জানাবো আপনাদের যা সত্যিই সকলের জন্য মঙ্গলময় হবে। আপনি কি জানেন ভারতে এমন এক মন্দির রয়েছে, যেখানে শিবলিঙ্গের কাছাকাছি কোন গাভী গেলেই সেই গাভীর ডোর থেকে অনবরত দুধ বইতে শুরু করে? ঠিক এই স্থানেই নাকি শিবের দর্শন পেয়েছিলেন রাবণের পিতা। বিশ্বাস করা হয় যে, এখানকার মহাদেব তুষ্ট হলে সেখানে পাওয়া যায় সোনা? সেখানে এমন এক সাধুর সমাধি রয়েছে যেখানে এলাচ নিবেদন করা হয়। এই মন্দির সম্পর্কিত এমন বিস্ময়কর তথ্য অনেকেরই অজানা। এই মন্দির সত্যিই অলৌকিক, আমরা কথা বলছি দিল্লীর কাছে গাজিয়াবাদের দুধেশ্বর মহাদেব মন্দিরের কথা।
ফুল মালা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় শিব লিঙ্গকেঃ
এই স্থানটিকে এতটাই জাগ্রত বলে মনে করা হয় যে, সারা বছরই এখানে ভক্তদের ভিড় লেগে থাকে। শ্রাবণ মাস এবং শিবরাত্রিতে এখানে এতটাই ভিড় হয় যে, এখানে তিল পরিমান জায়গাও থাকেনা। সাদা রঙ এবং লাল পাড় দিয়ে সাজানো এই মন্দিরে স্থাপিত শিবলিঙ্গের চারপাশ ধাতুর দিয়ে তৈরি এবং এর উপর অতি সুন্দর করে উকরি ফুল, ওম এবং নাগ খোদাই করা আছে যা অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই মন্দিরের আরও একটি বিশেষত্ব হল এখানে শিবলিঙ্গকে প্রতিদিন ফুল মালা দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়।
দুধেশ্বর মহাদেবের উৎপত্তিঃ
অমিশানন্দ’জী মহারাজের মতে, গরুর দুধ বর্ষণে মহাদেব মহিমান্বিত হওয়ার পর ভগবান শিবের নাম হয় দুগ্ধেশ্বর, অর্থাৎ দুধে প্রসন্ন ভগবান। বিশ্বাস করা হয় যে ভগবান শিব স্বপ্নে জুনা আখড়ার এক সাধুকে দর্শন দিয়েছিলেন এবং স্বপ্নে তাঁকে এই মহত্বপূর্ণ স্থানে পৌঁছানোর আদেশ করেন। এর পরেই এখানে খনন কাজ শুরু হয়, পরবর্তী সময়ে এই জায়গা থেকেই এক দিব্য শিবলিঙ্গ বেরিয়ে আসে। এরপর ভগবান শিবের কৃপায় গ্রামবাসী অভিভূত হয়। এছাড়াও, খননের সময়, শিব লিঙ্গের পাশাপাশি এক অনন্য কূপও এখান থেকে বের হয়। যার জল কখনও গঙ্গাজলের মতো, আবার কখনও দুধের মতো সাদা আবার কখনও মিষ্টি। এই কূপটি এখনও সিদ্ধপীঠ শ্রী দুধেশ্বর নাথ মঠ মন্দিরে রয়েছে।
রাবণের পিতার শিব দর্শনঃ
বিসরাখ গ্রামে, পুলস্ত্যের পুত্র এবং রাবণের পিতা ঋষি বিশ্রব তপস্যা করে ভগবান শিবকে খুশি করে, শিবের দর্শন পেয়েছিলেন। সেই জায়গা থেকে একটু দূরেই এই দুধেশ্বর মন্দির। বিসরাখ গ্রামের কাছে হারানন্দী নামে একটি নদীও প্রবাহিত হত, যা আজ হিন্দন নামে পরিচিত।
দুধেস্বর মন্দিরের অলৌকিক সাধুঃ
এই মন্দিরে অনেক সাধু ছিলেন যাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতা ছিল অসীম। কথিত আছে এই মঠের ১৫ জন সাধু এখানেই সমাধি গ্রহণ করেছেন। এই মন্দিরের নীচে একটি সুড়ঙ্গও রয়েছে যেখানে ঋষি ও সাধুরা বসে তপস্যা করতেন। অমিষানন্দ’জী মহারাজ জানান, মন্দিরে কিছু সমাধি রয়েছে। ভগবান দুগ্ধেশ্বর মহারাজের পাশাপাশি ভক্তরাও এই সমাধিস্থ সাধকদের আশীর্বাদ নেন।
মহারাজের সমাধিতে নিবেদন করা হয় এলাচ!
এখানে এক অলৌকিক সাধক ইলাইচি গিরি’জী মহারাজ ছিলেন, যিনি জীবন্ত সমাধি গ্রহণ করেন। বিশ্বাস করা হয় যে, কোন ব্যক্তি পূর্ণ ভক্তি সহকারে ইলাইচি গিরি’জী মহারাজকে পাঁচটি এলাচ নিবেদন করলে, তার ইচ্ছা অবশ্যই পূরণ হয়। অমিতশানন্দ’জী মহারাজ জানান, একটি মেয়ে এখানে মন্দির দর্শন করতে আসত এবং সে ছিল দশম শ্রেণির ছাত্রী, একদিন সেই মেয়েটিকে জিজ্ঞেস করা হলো, তুমি কী হতে চাও? সে বলল বড় হয়ে আমি ডাক্তার হতে চায়, সেই সময় স্বামীজি তাকে পরামর্শ দিলেন যে তুমি সংকল্প সহকারে এলাচ নিবেদন করো, ঠিক তেমনি ইলাইচি গিরি’জী মহারাজের সমাধিতে ৫টি এলাচ অর্পণ করে, এবং তার ইচ্ছা পূরণ হয় এবং সেই মেয়েটি আজ একজন ডাক্তার। এমন নানান বিশ্বাস এবং তথ্য রয়েছে ইলাইচি বাবার মহিমা নিয়ে।
শিবাজী করেছিলেন মন্দিরের পুনরুদ্ধারঃ
মারাঠা সম্রাট ছত্রপতি শিবাজী প্রায় ৪০০ বছর আগে তাঁর সেনাবাহিনী নিয়ে এখানে এসেছিলেন, যেহেতু শিবাজি একজন কট্টর সনাতনী এবং ইশ্বর বিশ্বাসী ছিলেন, তাই তিনি ভগবান দুধেশ্বরের দর্শন করেন এবং মন্দির পুনরুদ্ধার করার সংকল্প গ্রহন করেন। এই মন্দিরের পক্ষ থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে করা হয়ে থাকে বেদ বেদাঙ্গ পাঠ। এই মন্দিরটি জুনা আখড়া দ্বারা পরিচালিত, আদি শঙ্করাচার্যের ১০টি আখড়ার মধ্যে এই আখরাতে ১৬তম মহন্ত নারায়ণ গিরি সেখানে রয়েছেন। বিশ্বাস করা হয় যে প্রতি সোমবার এই মন্দিরে ভগবানের দর্শন করলে সমস্ত রোগ-শোক দূর হয়ে যায়। তাই একবার দুধেশ্বর নাথ মন্দিরে ঘুরে আসুন এবং ভোলেনাথের আশীর্বাদ নিন।
কিভাবে পৌঁছবেনঃ
দুধেশ্বর নাথ মন্দির দিল্লি সংলগ্ন উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদে অবস্থিত। গাজিয়াবাদ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মন্দিরটিতে বাস বা মেট্রো করে সহজেই পৌঁছে যাওয়া যায়। আপনি আপনার ব্যাক্তিগত গাড়ির মাধ্যমেও সহজে পৌঁছাতে পারেন এই মন্দিরে।