যেখানে কপিল মুনি করেছিলেন তপস্যা!
যার এক অভিশাপে সাগরের ৬০ হাজার পুত্রের মৃত্যু!
পৃথিবীতে মা গঙ্গার অবতরণের কাহিনী!
রয়েছে বদ্রিনাথের সমাধি!
স্নান করলে পাওয়া যায় গঙ্গাসাগরের মতো ফল!
নতুন দিল্লী:
ঈশ্বরের আবাস হিসেবে পরিচিত হরিয়ানা, ঋষিদেরও আবাসস্থল। প্রাচীনকালে বেশীর ভাগ বড় বড় সাধু-সন্ত, মুনি-ঋষিরা এখানেই অবস্থান করে তপস্যা করেছিলেন। স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন। সনাতন সংস্কৃতির হারিয়ে যাওয়ার মন্দির গুলোকে প্রচারের প্রতিষ্ঠায় আমাদের “জানে আপনে মন্দির” – এর টিম হরিয়ানায় কেথল জেলার কউল গ্রামে পৌঁছে এমন এক পবিত্র স্থানের দর্শন পেয়েছে যেখানে স্বয়ং ভগবান বিষ্ণুর পঞ্চম অবতার কপিল মুনি তপস্যা করেছিলেন। সেই পবিত্র তীর্থযাত্রার প্রতিটি তথ্য আপনাদের সামনে তুলে ধরছি আমরা।
ভাগবত গীতায় কপিলমুনির সম্পর্কে শ্রীকৃষ্ণ বলেন, ” সিদ্ধদের মধ্যে আমি কপিল।”
শ্রীমৎ ভাগবত গীতা অনুসারে:
পঞ্চমঃ কপিলো নম সিদ্ধেশঃ কালবিপ্লুতম্ প্রবাচাসূর্যে সাংখ্যম্ তত্ত্বগ্রামবিনির্ণয়ম্।
অর্থাৎ পঞ্চম অবধারে তিনি সিদ্ধদের অধিপতি স্বামী কপিল রূপে আভির্ভূত হন এবং সাংখ্যশাস্ত্র প্রচারের উপদেশ দেন।
যেখানে কপিলমুনি করেছিলেন তপস্যা:
হরিয়ানায় কপিল মুনির দুটি প্রধান তপস্যার স্থান রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কউল, যেখানে কপিল মুনি তপস্যা করেছিলেন এবং দ্বিতীয় স্থানটি হল কলায়ত যেখানে কপিল মুনি তাঁর মা’কে সাংখ্যশাস্ত্রের জ্ঞান দিয়েছিলেন। কথিত আছে যে মাতা দেবহুতিকে যোগদান করে, তাঁর অনুমতি নিয়েই কপিল মুনি উত্তর-পূর্বে চলে যান। সেখানেও তিনি গঙ্গাসাগরের কাছে তপস্যা করেন। গীতায় কপিল মুনিকে শ্রেষ্ঠ ঋষি বলা হয়েছে তাকে প্রাচীন ঋষি মনে করা হয়। কপিল মুনির তপস্যা বিশ্বাস এবং ভক্তির প্রতীক কউল গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত এটি কপিলমুনি তীর্থ নামেও পরিচিত। কথিত আছে কপিল মুনি এই স্থানে তপস্যা করেছিলেন। মহাভারত, বামনপুরাণ এবং ভাগবত পুরাণে এই তীর্থযাত্রার বর্ণনা আছে। তীর্থস্থানের পুরোহিত অভিষেকের মতে, কপিল মুনি এই স্থানে এসে তপস্যা করেছিলেন। কপিল মুনির এই তীর্থ একটি সিদ্ধ পীঠ। আর যারা ভক্তি সহকারে এই প্রাচীন তীর্থে আসেন তাদের সব ইচ্ছাই পূরণ হয়। মন্দিরের সেবা দান মোহন্ত দালারা পুরি জানান যে, কপিল মুনি এখানে তপস্যা করেছিলেন আর এখানে অবস্থিত প্রাচীন শিব মন্দিরটি মহাভারত আমলের থেকেও প্রাচীন। কউল গ্রামে অবস্থিত এই তীর্থস্থানে একটি জলাশয় রয়েছে, যেখানে স্নানের ভীষণ মাহাত্ম্য আছে।
কপিল মুনির মহিমা!
শ্রীমদ্ভাগবত গীতা অনুসারে কপিল মুনিকে বিষ্ণুর ২৪টি অবতারের মধ্যে পঞ্চম অবতার বলে জানা যায়। অগ্নির অবতার এবং ব্রহ্মার মানুষ পুত্র বলা হয়। সনাতন শাস্ত্র অনুসারে ঋষি কদর্ম বিয়ের আগে সত্যযুগে সরস্বতী নদীর তীরে ভগবান বিষ্ণুর কঠোর তপস্যা করেন। যার ফলশ্রুতিতে কদর্ম ঋষির ঘরে কপিল মুনি রূপে ভগবান বিষ্ণুর জন্ম হয়। কপিল মুনির মা ছিলেন স্বয়ম্ভু মনুর কন্যা দেবহুতি। কপিলমুনির বোনেরা ছিলেন কলা অনুসূয়া, শ্রদ্ধা, হবির্ভূ, গতি, ক্রিয়া, খ্যাতি, অরুন্ধতী। ভগবত পুরাণ অনুসারে কপিল মুনির পিতা-মাতা ছিলেন কদর্ম ঋষি এবং দেবহুতি। কদর্ম ঋষি যখন সন্যাস গ্রহণ করে গৃহত্যাগ করেন তখন কপিল মুনি তার মাকে যোগ বিদ্যার উপদেশ দেন, যার কারণে উনার মুক্তি হয়। উদ্ভব গীতায় বলা হয় যে, কপিল মুনির সাংখ্যযোগকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ভবকে দিয়েছিলেন। মহাভারতে কপিল মুনির উপদেশকে কপিল গীতা নামেও জানা যায়। কপিলমুনি তীর্থের কাছে বসবাসকারী কউলের বাসিন্দা সতবীর সিং’য়ের মতে কেন্দ্রীয় সরকারের দফতরের লোকেরা বহুবার এখানে এসে এর নির্মাণকাল অনুমান করার চেষ্টা করেছেন কিন্তু তারা এর সঠিক তথ্য কখনোই জানতে পারেননি।
এক অভিশাপে সাগরের ৬০ হাজার পুত্রের মৃত্যু! পৃথিবীতে গঙ্গার অবতরণ সম্পর্কিত কাহিনীঃ
এই সেই কপিল ঋষি যার একটি মাত্র অভিশাপে রাজা সাগরের ৬০ হাজার পুত্রের মৃত্যু হয়। শুধুমাত্র সাগরের মৃতপুত্রদের পরিত্রাণ প্রদানের জন্য পতিত পাবনি মা গঙ্গাকে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হতে হয়েছিল। তাই পৃথিবীতে মা গঙ্গার আগমনের সঙ্গে কপিল ঋষির সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। রাজা সাগর তার সাম্রাজ্যের সম্পৃক্তদের জন্য একটি অনুষ্ঠান করেছিলেন। একটি ঘোড়া ছিল এই অনুষ্ঠানের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ যা ইন্দ্র ঈর্ষান্বিতভাবে চুরি করে। এরপর সেই ঘোরার সন্ধানে রাজা সাগর তার সমস্ত পুত্রদের পৃথিবীর চারপাশে পাঠালেন সেই ঘোড়াকে খুঁজে আনতে। ধ্যানমগ্ন কপিল মুনির কাছে সেই ঘোড়াটিকে দেখতে পান রাজা সাগরের পুত্ররা। ঋষি কপিল সেই ঘোড়াটি চুরি করেছে বলে তাঁকে অপমান করে তপস্যা ভঙ্গ করেন রাজা সাগরের পুত্ররা। বহু বছরের তপস্যা ভঙ্গের পর কপিল প্রথম চোখ খুলে রাজা সাগরের পুত্রদের দেখতে পান এবং অভিশাপ দেন। ঋষি কপিলের অভিশাপে এক নিমিষে রাজার ৬০ হাজার পুত্ররা সেখানেই ছাই হয়ে যায়। পরবর্তী সময়ে শেষকৃত্য না করায় রাজার পুত্ররা প্রেতাত্মা রূপে বিচরণ করতে থাকে। তখন দিলীপের পুত্র এবং সাগরের বংশধর ভগীরথ এই দুর্ভাগ্যের কথা জানতে পারেন এবং মা গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন, এর একটাই কারন যেন গঙ্গার জল সাগরের পুত্রদের পাপ ধুয়ে মুছে দিতে পারে এবং পরিত্রাণ লাভ করাতে পারে। রাজা ভগীরথ মা গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসতে ব্রহ্মার তপস্যা শুরু করেন এবং মা গঙ্গাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন।
বদ্রীনাথের সমাধি!
কপিল মুনি তীর্থক্ষেত্র এলাকায় প্রায় ১৫ ফুট গভীর একটি সরোবর রয়েছে। এই সরোবরের মাঝখানেই রয়েছে মহান যোগী সাধক বদ্রি নারায়ণের সমাধি। এই সমাধিতে পৌঁছনোর জন্য একটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। কউল গ্রামের বাসিন্দা ঈশ্বর সিং “জানে আপনে মন্দির” -এর টিমকে জানিয়েছেন যে এই সমাধিতে দুধ অর্পণ করা হয়।
স্নান করলে ফল পাওয়া যায়, গঙ্গাসাগরের মতো!
কথিত আছে সব তীর্থ বারবার, গঙ্গাসাগর একবার। কিন্তু হরিয়ানার কপিল মুনি তীর্থস্থান এমনই, যেখানে গঙ্গা সাগরের স্নানের মতই পুণ্য প্রাপ্ত হয়। কপিলমুনি এখানে প্রথম পুকুরে স্নান করেছিলেন বলেই এই তীর্থস্থানে স্নানের এতটাই মহিমা। সেই সময় থেকে এই তীর্থে স্নানের মহিমা গঙ্গাসাগরের স্নানের মতই হয়ে উঠেছে। তীর্থস্থানের পুরোহিত অভিষেকের মতে, কপিল মুনি প্রথমে এখানে স্নান করেছিলেন বলে ধারণা করা হয় এই পবিত্র স্থানে স্নান করলে সমস্ত পাপ মুক্ত হয়ে যায়। তিনি জানান প্রতিবছর মকর সংক্রান্তির দিনে এখানে বিশাল মেলা বসে। করা হয় যজ্ঞও। দূর দূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ এই তীর্থে পৌঁছে স্নান করে পুণ্যের অংশীদার হন এবং কপিল মুনির আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। মন্দিরের পুরোহিত মহন্ত দালারা পুরির মতে “বিশ্বাস করা হয় যে, এই পবিত্র স্থানে স্নানের গুরুত্ব গঙ্গাসাগরে স্নান করার মতোই পুণ্য। প্রতি চার বছর পর এই সরোবরের জল খালি করা হয় কিন্তু এর জল কখনোই ফুরিয়ে যায় না”।
এখানেই হয়েছিল দানবীর কর্ণের রথের চাকা পিষ্ট!
কউল গ্রামের কপিলমুনি তীর্থেরও পূর্বে পশ্চিমে গদ্ধার্থেশ্বর তীর্থ বিদ্যমান। মহাভারতের দানবীর কর্ণের রথের চাকা যেখানে আটকে গিয়েছিল সেই স্থানটিকে গদ্ধার্থেশ্বর তীর্থ বলে মনে করা হয়। সেই সময় কর্ণ পরিক্রমশালী অর্জুনের হাতে নিহত হন। কথিত আছে মহাভারতের যুদ্ধে গুরুতর আহত হয়ে অন্তিম মুহূর্তের অপেক্ষায় শুয়ে থাকা ভীষ্ম পিতামহের দেহত্যাগের সময়ে বেদ ব্যাসের মতো ঋষিদের সঙ্গে কপিলমুনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সুরঙ্গের উপস্থিতি!
কথিত আছে যে শ্রী কপিলমুনি ধামের সাথে সংযোগকারী সুরঙ্গ সম্পর্কিত তথ্য এখনো বিদ্যমান। মন্দিরের পুরোহিত মহন্ত দালারা পরীর মতে, “মন্দিরের সামনের সুরঙ্গটি এখনো রয়েছে কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে ব্যবহার হচ্ছে না। ছোট ইটের তৈরি ভারতের সবচেয়ে বড় তীর্থস্থান”। বলা হয়ে থাকে যে পূর্বে কউল গ্রামের নাম ছিল কপিল গ্রাম যা কপিলমুনির সংকেত বহন করে। পরে তা কপিল থেকে কউল হয়েছে। এই তীর্থস্থানটি তিন দিক থেকেই ছোট ইট দিয়ে তৈরি, চতুর্থ দিকে রয়েছে একটি বিশাল সেতু। ছোট ইটের তৈরি এই তীর্থস্থানটি ভারতের বৃহত্তম ছোট ইটের তৈরি তীর্থস্থান।
তীর্থ স্থানের প্রাকৃতিক দৃশ্য!
এই তীর্থ স্থানের একপাশে রাধা কৃষ্ণ মন্দির অন্য পাশে শিব মন্দির এবং তার সঙ্গে রয়েছে হনুমান মন্দির। রাধাকৃষ্ণ মন্দির যা অতীত প্রাচীর আর এর গম্বুজ বিশাল, কয়েকশো বছরের পুরনো এই মন্দিরে হস্তশিল্পের চিত্রকর্ম রয়েছে। সরোবরের তীরে রয়েছে প্রায় ২৫ ফুট প্রাচীন শিব মন্দির। এর ছাদে মনমুগ্ধকর চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। এসব বরাহ অবতার, নরসিংহ অবতার, পুতনা-বধ, কৃষ্ণ-রাশ, বিষ্ণু-দানব যুদ্ধ তপস্যায় মগ্ন ঋষি, অশ্রু ও সুন্দর ফল পাতা অঙ্কিত রয়েছে। বামন পুরানে বর্ণিত কউল তীর্থ একটি প্রাচীন ও দর্শনীয় তীর্থস্থান। সেখানে আছেন শিব-পার্বতী, হাতি, সাধু ঋষি এবং কৃষ্ণ-রাস, শীষ নাগের বহু প্রাচীন অঙ্কিত চিত্র। এই তীর্থক্ষেত্রটি প্রায় চার একর জমির উপর অবস্থিত। তীর্থ ক্ষেত্রের মন্দিরের দেয়ালে আঁকা আছে, হাতে তলোয়ার নিয়ে যোদ্ধা, রয়েছে বহু সন্ন্যাসীর ছবি। মন্দিরের গর্ভগৃহের দেয়ালে অলংকরণের পাশাপাশি জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রার চিত্রকর্ম, শায়িত বিষ্ণু, গীতা উপদেশ, হনুমান, রুক্মিণী হরণ, শিবা-পার্বতী, গণেশ এবং প্রকৃতির চিত্র দৃশ্যমান। আর এখানেই রয়েছে হনুমানের প্রাচীন মন্দির। মন্দিরের পূজারী অভিষেকের মতে, মানুষ প্রতিদিন এই তীর্থস্থানে আসেন, কিন্তু রবি, সোম ও মঙ্গলবার এখানে পুজোর বিশেষ দিন; এই দিনে হয় প্রচুর ভিড়। মন্দিরের আরতি হয় ভোর পাঁচটায় এবং সন্ধ্যা সাতটায়। মকর সংক্রান্তি ও দীপাবলির দিনে এখানে হয় বিশাল অনুষ্ঠান। মকর সংক্রান্তির দিনে ভক্তরা কপিল মুনির জন্ম দিবস পালন করেন। কউলের বাসিন্দা সতবীর সিং’য়ের মতে, এখানে অবস্থিত শিব মন্দিরটি মহাভারত আমলের। কপিল মুনির তপস্যাস্থলে অবস্থিত মন্দিরটি ৮০০ বছরের পুরনো। এখানে স্নান করার পর শিবালয়ে জল নিবেদন করা হয়। প্রচলিত আছে যে, মঙ্গলবার হনুমানের দর্শন এবং রবিবার কপিল মুনির পুজো বিশেষ ফল প্রদান করে। আর এখানে পুজো হয় বৈষ্ণব পদ্ধতিতে।
সরোবরের মাহাত্ম্য, স্নানে সারে চর্মরোগ!
সরোবরে তীরে একটি প্রাচীন মন্দিরও আছে তার মধ্যে একটি সরোবরেই রয়েছে, যার জল কখনো শেষ হয় না। এই মন্দিরের ওপরে একটি কূপ রয়েছে বলে ধারণা করা হয়, যার যোগাযোগ সরাসরি সরোবরের সঙ্গে। এই সরোবরের উত্তরে একটি মধ্যযুগীয় কৃষ্ণ মন্দির রয়েছে। কপিল মুনি নামের এই তীর্থস্থানটি কেথল থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে কউল নামক একটি গ্রামে অবস্থিত। কউলের বাসিন্দা ঈশ্বর সিং জানান, এখানে স্নান করলে সমস্ত চর্মরোগ সেরে যায়। সতবীর সিং জানান এখানে স্নানের মাধ্যমে চর্মরোগ প্রতিরোধ করা যায় মনে করা হয় এখানে আন্তরিক চিত্তে স্নান করলে এবং ব্রত প্রার্থনা করলে চর্মরোগ সহ যাবতীয় রোগ নিরাময় হয়।
প্রাচীন সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়ের ধ্বংস!
কউলের সংস্কৃত কলেজ দেশ বিদেশে বিখ্যাত ছিল। তীর্থস্থানের পুরোহিতের মতে প্রাচীনকালে মন্দিরে একটি সংস্কৃত মহাবিদ্যালয় ছিল। যেখানে সংস্কৃত শিক্ষা দেয়া হতো দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে সংস্কৃত শিক্ষা নিতেন। বহু পন্ডিত ও জ্যোতিষী এখান থেকে জ্ঞান নিয়ে বিদেশের মাটিতে ভারতের জয়গান করেছেন। মাধবাচার্য ছিলেন তাদেরই একজন। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার অভাবে এই বিখ্যাত সংস্কৃত মহাবিদ্যালয়টি কালের বিবর্তনে ধ্বংস হয়ে যায়।
তীর্থে ভাসানো হয় অস্থি!
কপিল মুনি তীর্থের গুরুত্ব এতটাই যে কুরুক্ষেত্র বা হরিদ্বারে অস্থি বিসর্জন করার পরিবর্তে গ্রামে কেউ মারা গেলে কপিলমুনি তীর্থে সেই ছাই বিসর্জন দেওয়া হয়। এখানে বিদ্যমান প্রাচীন সরবর জলের প্রাকৃতিক উপহার।
পূর্ণ হয় সন্তান প্রাপ্তির ইচ্ছাও, ব্রিটিশ রাও হয়ে গিয়েছিলেন ভক্ত!
কপিলমুনি তীর্থের মহিমা এতই বেশি যে সত্য চিত্তে চাওয়া হলে প্রতিটি ইচ্ছেই পূরণ হয়। তাই দেশ বিদেশের মানুষ কপিলমুনি তীর্থের মহিমার ভক্ত। কউলের বাসিন্দা ঈশ্বর সিং,”জানে আপনে মন্দির”-এর টিমকে জানিয়েছেন যে, “এক ব্যক্তি যিনি তীর্থস্থানের পুরনো পুরোহিত, ঈশ্বর সিং -এর সাথে এক ব্যক্তি দেখা করতে এসেছিলেন। পেশায় তিনি ছিলেন পোস্টম্যান। আর তার কোন সন্তান ছিল না। এখানে তীর্থযাত্রা করতে গিয়ে তার একটি সন্তান লাভের ইচ্ছা জাগে এবং কপিল মুনির আশীর্বাদে তার ব্রত এক বছরের মধ্যে পূর্ণ হয়। আর তিনি সন্তান লাভ করেন। একই ভাবে এক ইংরেজ এখানে তীর্থ যাত্রা করতে এসেছিলেন তারও কোন সন্তান ছিল না। তিনি মানত চাইলেন আর তার ইচ্ছাও পূরণ হয়”।
বিবাহের মানত হয় পূর্ণ!
কউলের বাসিন্দা টিংকু আগারওয়াল এর মতে, “এখানে মানুষের বিয়েরও মানত পূরণ হয়। এমন বহু মানুষের বিবাহের মানত এখানে পূর্ণ হয়েছে। আর মানব পূরণের পর মানুষ আবার এসে এখানে পূজার্চনা করে”।
অযোধ্যার আদলে দীপাবলি, পশুর নামেও জ্বালানো হয় প্রদীপ!
কউলের বাসিন্দা সাতবীর সিং -এর মতে, এখানে দীপাবলীর দিনটি সকলের কাছেই বিশেষ। অযোধ্যার আদলে এখানে দীপাবলীর আয়োজনে গত বছর দীপাবলীর দিনে ৭১ হাজার প্রদীপ জ্বালানো হয়েছিল। গত বছরের দীপাবলিতে এক লাখেরও বেশি প্রদীপ জ্বালানোর পরিকল্পনা আছে। তিনি জানান বাড়ির সব সদস্যের নামে প্রদীপ জ্বালানো হয়। এমনকি পশু পাখির নামেও প্রদীপ জালানো হয়।
সংকট দূর করে মাছেরা!
স্থানীয় গ্রাম কউলের বাসিন্দা টিংকু আগারওয়াল “জানে আপনে মন্দির”-এর টিমের সাথে একটি বিশেষ তথ্য ভাগ করে নেওয়ার সময় বলেন যে হ্রদের মাছগুলো গ্রামবাসীদের দূর্দশা দূর করে এবং তাদের কষ্ট নিজের উপরে নিয়ে নেয়। তিনি বলেন গ্রামে বড় কোন সমস্যা হলেই পুকুরের মাছ গুলো মারা যায়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে গ্রামের সংকট সে নিজেই নেয়, তাই সে মারা যায়।
কিভাবে পৌঁছবেন কপিল মুনি তীর্থে?
দিল্লি থেকে প্রায় ২২০ কিমির দূরত্বে হরিয়ানার কেথল জেলার পুণ্ডরী তহশিলে অবস্থিত কৌলগ্রাম কবিখ্যাত কপিল মুনি তীর্থ এবং পবিত্র সরোবর। অন্যদিকে কেথল বাসস্ট্যান্ড থেকে এর দূরত্ব মাত্র ২৮ কিমি। চাইলে সেখানে রেলে পৌঁছে যাওয়া যায়, তবে রেল ভ্রমণ করুন শুধুমাত্র কর্নাল বা কুরুক্ষেত্র পর্যন্ত। হরিয়ানার সরকারি বাস এবং স্থানীয় পরিবহনও সহজে পাওয়া যায়।
সম্পাদক মন্তব্যঃ “জানে আপনে মন্দির” – এর টিম যখন এই বিখ্যাত কপিলমুনি তীর্থে পৌঁছেছে তখন উপলব্ধি করে যে, এখানে উন্নয়নের অতি প্রয়োজন। প্রাচিন এই তীর্থস্থানের অনেক বস্তুই বিলুপ্তির পথে। কপিলমুনি ও গদ্ধার্থেশ্বরের মতো তীর্থস্থানের অবশিষ্টাংশ এখনো দৃশ্যমান। বহু বছর আগে কুরুক্ষেত্র উন্নয়ন পর্ষদ এই তীর্থক্ষেত্রে তাদের বোর্ড বসিয়েছিল কিন্তু তীর্থস্থানটির সংস্কারের জন্য কোন যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সরোবরের জল কখনো শুকিয়ে না গেলেও এর পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে। এখানকার জল নোংরা থাকায় এখানে স্নান করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এখানকার প্রাচীন মন্দিরটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, অন্যান্য প্রাচীন বস্তুগুলিও অপ্রতিকূলতায়।