মন্দিরে স্থাপিত ভগবান হনুমানের ব্রাহ্মণ রূপ!
পাকিস্তান থেকে হরিয়ানায় স্থানান্তরিত মন্দিরটিঃ
পাকিস্তান থেকে হরিয়ানায় স্থানান্তরিত এই হনুমান মন্দির?
ইতিহাস সমৃদ্ধ মন্দির হরিয়ানার শ্রী বিরাজী কৃপা ধাম।
ভারতের বেশিরভাগ মন্দির গুলোই বেশ প্রাচীন এবং মন্দির গুলোর সৌন্দর্য দেখার মতো, সেই মন্দির গুলোর রয়েছে নিজস্ব কিছু ইতিহাস। আমরা আপনাদের এমনই এক মন্দিরের ইতিহাস আজ আপনাদের জানাবো, যে মন্দিরটি পাকিস্তান থেকে ভারতের হরিয়ানা রাজ্যে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। এই মন্দিরের নাম শ্রী বিরাজী কৃপা ধাম। বজরংবলির এই বিশাল মন্দিরটি হরিয়ানার পানিপথ জেলার দেশরাজ কলোনিতে অবস্থিত। এই মন্দিরেই ব্রাহ্মণ রূপে বিরাজমান ভগবান হানুমান হনুমানজীর রূপটি ভীষণ আকর্ষণীয়। মন্দিরের ইতিহাস সম্পর্কে যদি বলি, মন্দিরের পুরোহিত ডক্টর নন্দকিশোর কৌশল জানিয়েছেন, এই মন্দিরটি তাঁর পূর্বপুরুষরা তৈরি করেছিলেন। দেশভাগের সময় তাঁর পূর্ব পুরুষরা এই মূর্তিটিকে ভারতে নিয়ে এসেছিলেন। এই হরিয়ানার সাথে ভগবান হনুমানের রয়েছে বিশেষ সম্পর্ক। জানা যায়, এর আগে হরিয়ানার কেথল, কপিস্থল নামে পরিচিত ছিল। কপিস্থলের রাজা ছিলেন হনুমানের পিতা কেশরী। মনে করা হয়, কেথলই ভগবান হনুমানের জন্মস্থান। সেই কারনে হনুমান পানিপথের মহারাজা নামেও পরিচিত। প্রতি বছর হনুমান’জীর জন্মবার্ষিকী এই শহরে খুব আড়ম্বরে পালিত হয় এবং সারা শহর জুড়েই হয় এই উদযাপন হয়। এই বিরাজি ধামে প্রতিবছর হনুমান’জীর জন্মবার্ষিকী একটি বিশেষ উৎসব হিসেবে পালিত হয়।
প্রতি মঙ্গল ও শনিবার বসে বিশাল মেলাঃ
দাবী করা হয়, বিরাজি ধামে ভগবান হনুমানের যে রূপ দেখা যায়, তা গোটা ভারত সহ বিশ্বের কোনো প্রান্তেই দেখা যায়না। এই মন্দিরে প্রতি মঙ্গলবার এবং শনিবারে বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে ভক্তদের ভিড় হয় দেখার মতো। বহু দূর-দূরান্ত থেকে ভক্তরা আসেন এই মন্দিরে হনুমানের দর্শন পেতে। প্রতি দিন মন্দিরে আরতি হয় দু’বার, সকাল ৭টায় এবং সন্ধ্যা ৭টায়। পাশাপাশি এই মন্দিরে পূজা করা হয় বৈদিক পদ্ধতিতে।
মন্দিরে স্থাপিত ভগবান হনুমানের ব্রাহ্মণ রূপঃ
হনুমান’জীর ব্রাহ্মণ রূপ এই মন্দিরেই প্রতিষ্ঠিত। দাবী করা হয় যে হনুমান’জীর ব্রাহ্মণ রূপ এই পৃথিবীর আর কোথাও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। মন্দিরে উপস্থিত হনুমান’জীর এই অপরূপ খুবই আকর্ষণীয়। ভগবান হনুমানের এই বিশেষ রূপ সম্পর্কে ডক্টর নন্দকিশোর কৌশল বলেন, “যখনই ভগবান হনুমান দর্শন দেন তখনই তিনি ব্রাহ্মণ রূপে দর্শন দেন”। তিনি দাবি করেন যে, হনুমান’জী তাঁর পূর্বপুরুষদের কাছে ব্রাহ্মণ রূপেই আবির্ভূত হয়েছিলেন। কিন্তু হনুমানের ব্রাহ্মণ এই রূপের মন্দির কোথাও নেই। ডক্টর নন্দকিশোর কৌশল বলেছেন যে তাঁর অনুভূতি ছিল যে তাঁর ব্রাহ্মণ-শৈলীর মন্দির স্থাপন করা উচিত। এখানে আগমন করলে ভক্তদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস রয়েছে।
শিবায় মাতার মন্দিরও অবস্থিত এখানেইঃ
হনুমান’জীর পাশপাশি মন্দির চত্বরে রয়েছে শিবায় মাতার মন্দির। যেখানে শিবায় মাতার অত্যন্ত আকর্ষণীয় মূর্তি বিরাজমান। শিবায় মাতা খত্রী নামে বেশ পরিচিত, এছাড়াও তিনি কৌশল বর্ণের কুলদেবী নামেও পরিচিত। এই মন্দিরটিও একই ভাবে পাকিস্তান থেকে এখানে স্থানান্তরিত হয়েছে। এই মন্দিরের ভিতরেই রয়েছে একটি প্রাচীন পিপল গাছ, সেই সঙ্গে রয়েছে একটি বিশাল আমলকী গাছ; শিবায় মাতার সঙ্গে এই গাছ গুলোরও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই মন্দির চত্বরেই আবার রয়েছে ভগবান শিবের একটি অপূর্ব শিবলিঙ্গও, এখানে বিরাজমান শিবলিঙ্গ, বীরেশ্বর নামে পরিচিত। এই মন্দিরে শিবকে গৌরীশঙ্কর নামে পূজা করা হয়। এছাড়া মন্দির চত্বরে রাধা কৃষ্ণ ও রাম মন্দিরের রূপও রয়েছে। মন্দির চত্বরে মহাদেবের একনিষ্ঠ ভক্ত নন্দী মহারাজকেও যায় দেখা। এই দৃশ্যটি সত্যিই খুব আকর্ষণীয়। দীর্ঘদিন ধরে এই মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত পানিপথের বাসিন্দা আশিস বাজাজ বলেন, তিনি যখনই হতাশ হন, এখানে আসেন এবং তিনি অসাধারণ এক ঐশ্বরিক অনুভূতি পান। ভক্তরা জানিয়েছেন, এই মন্দির তাদের মনকে প্রশান্তি প্রদান করে। তারা জানান যে, এখানে আসার পর তারা নিজেদের ঈশ্বরের খুব আপন বলে অনুভব করেন। এখানে বিপুল সংখ্যক ভক্তের সমাগম হয় প্রতিদিনই, নববিবাহিত দম্পতিরা মায়ের দর্শন পেতে এবং ঈশ্বরের আশীর্বাদ পেতে এখানে আসেন। এখানে আসা সকল ভক্তরাই খুব ভক্তি সহকারে মন্দিরে পুজা করেন এবং সেবাও দিয়ে থাকেন। আপনি যদি এই প্রাচীন মন্দিরটি দর্শনের পরিকল্পনা করেন, তবে আপনাকে আসতেই হবে হরিয়ানার পানিপথে। মন্দিরে গিয়ে আপনি এক মনোরম অভিজ্ঞতা অনুভব করতেই পারেন।